Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৩১st মার্চ ২০২৩

রাবার চাষের ইতিবৃত্ত

রাবার একটি লাভজনক কৃষিভিত্তিক শিল্প। মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনে এবং আধুনিক সভ্যতার বিকাশে রাবারের গুরুত্ব অপরিসীম । বিশ্বে রাবার থেকে বর্তমানে প্রায় ৪৬ হাজার পণ্য তৈরী হচ্ছে। রাবার বাগানগুলো অত্যন্ত শ্রমঘন কৃষি শিল্প হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত পাহাড়ী অঞ্চলে অবসি’ত বাগানগুলোতে অশিক্ষিত/অর্ধশিক্ষিত নারী পুরুষের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও গ্রামীন জনপদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। কার্বন শোষন ও মাটির ক্ষয়রোধের মাধ্যমে রাবার বাগান পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। প্রাকৃতিক কাঁচা রাবার আমদানির ক্ষেত্রে ব্যায়িত কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। রাবার গাছ রোপনের পর ৬ বছর পরিচর্যা শেষে ৮ম বছরে উৎপাদনে আসে এবং ২৫ বছর অব্যাহত উৎপাদন দেয়ার পর ৩২-৩৩ বছর বয়সে গাছগুলো অর্থনৈতিক জীবনচক্র হারায়। ঐ সকল গাছ কেটে প্রাপ্ত কাঠ প্রক্রিয়াজাতকরণের পর শক্ত ও টেকসই ১ম শ্রেণীর পর্যায়ের কাঠ হতে উন্নতমানের আসবাবপত্র এবং কাঠজাত সামগ্রী তৈরী করা হয়। মালয়েশিয়া রাবার কাঠ হতে পার্টিকেল বোর্ড,লেমিনেটিং বোর্ড, মিডিয়াম ডেনসিটি ফাইবার বোর্ড () ইত্যাদি তৈরী করে বিশ্ববাজারে রাবার কাঠের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। অপরদিকে শ্রমিক সংকট এবং শ্রম দর বৃদ্ধি পাওয়ায় মালয়েশিয়া পর্যায়ক্রমে রাবার চাষ সংকুচিত করে পামওয়েল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠায় বাংলাদেশের জন্য ইহা একটি সুর্বণ সুযোগ হয়ে উঠতে পারে। কাজেই বাংলাদেশে রাবার চাষ অত্যন্ত লাভজনক এবং সম্ভবনাময় শিল্প হওয়ায় ব্যাপকভাবে রাবার চাষে এগিয়ে আসা একান্ত জরুরী। রাবার সম্পর্কে এদেশের মানুষের তেমন কোন ধারনা নেই,দেশে এ সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য বা প্রকাশনাও নেই। এ অবস্থায়, রাবার এবং রাবার চাষ সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ও পূণাঙ্গ ধারণা দেয়ার উদ্দেশ্যে “রাবার এর ইতিবৃত্ত এবং রাবার চাষ, উৎপাদন প্রকিয়াজাতকরণ ” শীর্ষক আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। আমাদের বিশ্বাস, এ থেকে রাবার সম্পর্কে মোটামুটি একটি ধারণা পাওয়া যাবে এবং ইচ্ছা করলে একজন সাধারণ পাঠকও রাবার চাষে উদ্ধুদ্ধ হন এবং রাবার চাষ করেন তবে, আমাদের এ উদ্যোগ স্বার্থক হবে।

রাবার এর ইতিবৃত্ত ঃ

উদ্ভিদ জগতের ইউফরবিয়াসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হিভিয় ব্রাসিলিয়েনসিস বা আমাদের রাবার গাছ প্রাকৃতির এক আশ্চর্য সুন্দর সৃষ্টি। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান উপত্যকার প্রাকৃতিক বনাঞ্চল হচ্ছে রাবার গাছের আদি নিবাস। ক্রিস্টোফার কলম্বাসকে দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম রাবার আবিষ্কার হিসেবে গণ্য করা হয়। জানা যায় ১৪৯৬ সালে তার দ্বিতীয় যাত্রার পর তিনি কিছু রাবার বল নিয়ে আসেন, যা এক ধরনের গাছের আঠা হতে তৈরী। হাইতির লোকেরা খেলার জন্য উক্ত বল ব্যবহার করতো। ১৮৭৩-১৮৭৬ সালের মধ্যে বৃটিশ নাগরিকের একটি উৎসাহী দল আদি বাসস্থান ব্রাজিল থেকে কিছু রাবার বীজ এনে পরীক্ষামূলকভাবে লন্ডনের কিউগার্ডেনে রোপন করেন। এখান থেকে প্রায় ২০০০ চারা বর্তমান শ্রীলংকাতে প্রেরণ করা হয় এবং সেখান থেকে কিছু সংখ্যক চারা মালয়েশিয়া, জাভা দ্বীপপুঞ্জ, সিংগাপুর পরবর্তীতে কিছু চারা হন্ডিয়া ও অন্যান্য দেশে পাঠানো হয়। এ চারাগুলো হতেই প্রাচ্যে রাবার চাষের গোড়াপত্তন হয়। রাবার গাছ থেকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কষ আহরণের পদ্ধতি আবিষ্কার করে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেন সিংগাপুর পদার্থ ল্যাটেক্সই হচ্ছে রাবার। যার মধ্যে রাবার পার্টিক্যাল কলোয়েল আকারে ভাসমান থাকে। লেটেক্সের মধ্যে শতকরা প্রায় ২৫-৩০ ভাগ রাবার হাইড্রোকার্বন, ৬০ ভাগ পানি, বাকি অংশে প্রোটিন, পেগমেন্ট, লবণ ও চিনি জাতীয় পদার্থ।

বাংলাদেশে রাবার চাষের সংক্ষিপ্ত চিত্র ঃ

বাংলাদেশে রাবার চাষের প্রাপ্ত তথ্যাবলীতে জানা যায় কলিকাতা বোটানিক্যাল হতে ১৯১০ সালে কিছু চারা এনে চট্রগ্রামের বারমাসিয় ও সিলেটের আমু চা বাগানে রোপন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে বনবিভাগ টাংগাইলের মধুুপুর, চট্রগ্রামের হাজেরীখিল ও পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় পরীক্ষামূলক কিছু গাছ রোপন করে। ১৯৫৯ সনে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার () বিশেষজ্ঞ মিঃ লয়েড  এদেশের জলবায়ু ও মাটি রাবার চাষের উপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করে রাবার চাষের সুপারিশ করেন। ১৯৬০ সনে বনবিভাগ ৭১০ একরে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে চট্রগ্রামের রাউজানে ১০ একর এবং কক্সবাজেরর রামুতে ৩০ একর বাগান সৃষ্টির মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে এদেশে রাবার চাষের যাত্রা শুরু হয়। রাবার চাষ সমপ্রসারণের লক্ষ্যে সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৬২ সালে বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের নিকট বাণিজ্যিকভাবে রাবার চাষের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়।

১৯৬২ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন বাংলাদেশ সরকার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কারিগরী ও আর্থিক সহায়তায় চট্রগ্রাম অঞ্চলে ৭ টি, সিলেট অঞ্চলে ৪টি এবং টাংগাইল-শেরপুর অঞ্চলে ৫টি সহ মোট ১৬ টি বাগানে সর্বমোট ৪৩৬৩৫ একর এলাকায় রাবার বাগান সৃজন করেছে।